দারুণ কোনো অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তকে যেমন পরিবর্তন করে ফেলতে পারে, তেমনি পরিণত করতে পারে ভিন্ন, অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কোনো মানুষে, ভিন্ন কোনো ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বিশেষত তরুণরা যেন তাদের জীবনকে ব্যতিক্রমভাবে এবং সৃজনশীলতার মাঝে নিজেকে খুঁজে নিতে পারে, নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে নতুনভাবে এবং জীবনের নানা সব সুযোগ ও জীবনের বৈচিত্র্যময় দিকের সাথে পরিচিত হতে পারে।
এমন সব ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মিশেলেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো লাইফ এক্সপেরিয়েন্স ক্যাম্প-২০২২। ব্যতিক্রমী সব ধারণা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথমবারের মতো এই ক্যাম্প আয়োজন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নি(জিসিএফআইএল), ট্রাভেল বাংলাদেশ এবং ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিস।
প্রথমবার এই ক্যাম্পটির ভেন্যু ছিলো কক্সবাজারে, হিমছড়ির নিকটে ক্যাম্প ইন কক্স নামের একটি ন্যাচারাল রিসোর্টে। এই ক্যাম্পে ছিলো বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ারিং, ট্রেইনিং, আলোচনা, নানা রকমের খেলাধুলা/এক্টিভিটিস, মেডিটেশন, ভোরের ওয়ার্মআপ , মেরিন ড্রাইভে রানিং, রেজুখালে কাইকিং, সি বিচ উপভোগ, ক্যাম্পফায়ার সহ নানা আয়োজন।
৭ ও ৮ অক্টোবর; দুদিনের এই আয়োজনের ওপেনিং সেশনে কক্সবাজারে ট্যুরিজম ও ট্রাভেলার নিয়ে কথা বলেন কক্সবাজার সিটি কলেজের হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক মইনুল হাসান পলাশ, কক্সবাজারে হোটেল বিজনেস ও ট্যুরিজম নিয়ে কথা বলেন প্রাণ আরএফএল গ্রুপের হসপিটালিটির প্রধান মোঃ নাসির উদ্দিন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা, এনজিও এক্টিভিটিস ও পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন হল্যান্ড ভিত্তিক এনজিও এমএসএফ এর অপারেশন্স কর্মকর্তা মমতাজ পারভিন এবং ইউএনএসসিআর এর সাবেক কর্মকর্তা ফারহানা জাহান৷ এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিং শেষে ছিলো প্রাণবন্ত প্রশ্ন-উত্তর পর্ব।
সন্ধ্যায় ছিলো সি বিচের সূর্যাস্ত উপভোগ, হাঁটাহাঁটিও আড্ডা। রাতের ডিনার শেষে ছিলো আরেকটি সেশন ও ক্যাম্পফায়ার। এই সেশনে ডেলিগেটরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেই সাথে কক্সবাজারে এনজিও এক্টিভিটিস, রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের সংকট নিয়ে কথা বলেন পালসের কর্মকর্তা অমিত তুষার। প্রায় দুই ঘণ্টার অধিক সেশন শেষে রাতযাপন ছিলো সুসজ্জিত তাঁবুতে।
ভোরে সমুদ্রের গর্জনে ঘুম ভাঙে। পরিকল্পনা ছিলো মেডিটেশন, ওয়ার্মআপ, মেরিন ড্রাইভে রানিং এবং রেজুখালে কায়েকিং। বাংলা চ্যানেল সাঁতারু ও রানার শুভ্র মাহমুদ কামালের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় এই পর্ব। প্রথমে হালকা ওয়ার্মআপ এরপর রানিং। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই একসাথে রানিং ছিলো দারুণ আনন্দদায়ক। রান শেষে রেজুখালে গিয়ে কায়েকিং করা হয়৷ পাশাপাশি সমুদ্রের সঙ্গে কিছুটা মিতালী শেষে আবার ফেরা ক্যাম্পে। তারপর সকালের নাস্তা এবং আড্ডা।
দুপুর ১২টা থেকে ছিলো ক্যাম্পিং-এর ওপর এক্টিভিটিস। এই সেশনে মেন্টর ছিলেন ক্যাম্প ইন কক্স এর প্রধান শাওন সুজন। পাহাড়, সমতল ও সমুদ্রে ক্যাম্পিং এর নিয়ম-কানুন সহ যাবতীয় বিষয়ে এই সেশনে এক্টিভিটিস করান তিনি। এই পর্বে দ্বিতীয় সেশন ছিলো টিম বিল্ডিং ও নেটওয়ার্কিং এর উপর। এই সেশন পরিচালনা করেন হেল্প দ্য ফিউচারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লাহ খালেদ। উপভোগ্য এই দুটি সেশন শেষ করতে করতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যায়। সমুদ্রের মাছসহ নানা মজাদার খাবার ছিলো দুদিনের আয়োজনে।
দেখতে দেখতে লাইফ এক্সপেরিয়েন্স ক্যাম্পের সমাপনী সেশনের সময় চলে এলো। বিকাল ৩টায় সমাপনীতে ছিলো কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা, সংকট, সম্ভাবনা এবং তারুণ্য ইত্যাদি বিষয়ে সেশন। সমাপনীতে অতিথি ও সেশনে প্যানেলিস্ট ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার(চকরিয়ার সার্কেল) ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি তফিকুল আলম। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন, কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা ও তরুণ নেতৃত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তফিকুল আলম।
এরপর ছিলো বেস্ট ক্যাম্পার অ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট বিতরণ। পুরো ক্যাম্পে বেস্ট পারফরম্যান্সের ওপর চারজনকে বেস্ট ক্যাম্পার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বেস্ট ক্যাম্পার হয়েছেন নাভানা আফরোজ, ফটোগ্রাফার সুকান্ত দে, রানার ও সুইমার শুভ্র মাহমুদ কামাল এবং নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওহি।
ক্যাম্প মেন্টর ও ট্রাভেল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আহসান রনির সঞ্চালনায় ক্যাম্প সমাপনী ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লাইফ এক্সপেরিয়েন্স ক্যাম্পের ডিরেক্টর ও গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাইফুল্লাহ সাদেক। এর মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয়ে গেলো দুদিনের লাইফ এক্সপেরিয়েন্স ক্যাম্প। নিজেকে নতুন নতুন দিক ও জীবনের অভিজ্ঞতায় সম্পৃক্ত করার এমন ক্যাম্পের উদ্যোগ যেন সব সময় অব্যাহত থাকে সেই প্রত্যাশাই সবার।