ব্রণ প্রায় প্রত্যেকের কাছে সুপরিচিত একটি সমস্যা। ছেলে মেয়ে উভয়ের ত্বকে দেখা যায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি যা ফুলে বড় হয়ে রূপ নেয় ব্রণের। একটা সময় ব্রণ চলে গেলেও থেকে যায় ব্রণের কালো দাগ ও ওপেন পোরাস।
ধরুন আপনি কোনো অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হচ্ছেন। খুব সুন্দর পোশাকে সাজিয়েছেন নিজেকে কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল গালে এবং কপালে উঠা ব্রণে। এতো সুন্দর করে নেয়া প্রস্তুতি মলিন হয়ে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
ব্রণজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের সাধারণ একটি প্রশ্ন ব্রণ কেন হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে শোভন মেকওভারের রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ শোভন বলেন, ” ব্রণ হওয়ার একাধিক কারণ থাকলেও হরমোনাল সমস্যা, বয়ঃসন্ধিকাল, তৈলাক্ত ত্বক, এলার্জিজনিত সমস্যা, ধূলাবালির সমস্যাগুলোই মুখ্য। ব্রণ হওয়ার কারণ ও ত্বক ধরণ বিবেচনায় এর যত্ন ও প্রতিকার ব্যবস্থাও ভিন্ন। আমাদের মধ্যে অনেকেই ত্বকের ধরন না বুঝেই নানারকম কসমেটিক পন্য ব্যবহার করেন যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। ত্বক ভালো রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও ঘরোয়া কিছু যত্ন খুবই উপকারী। এছাড়াও ত্বকে কোনোরকম ইনফেকশন দেখা দিলে এক্সপার্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।”
নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে পড়তে হবে ব্রণ, কালো দাগসহ নানা বিড়ম্বনায়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রণ কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় :-
নিমপাতা: নিমের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। রূপচর্চায়ও এর জুরি মেলা ভার। নিমপাতা ও তুলসি পাতার সাথে ১চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পেস্ট। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর স্ক্রাব করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ২ চা চামচ নিম পাতার সাথে ২ চা চামচ পাকা পেঁপে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিস্তেজ ত্বককে সতেজ করে তুলবে।
ঘৃতকুমারী/ এলোভেরা: এলোভেরায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘এ’ যা ত্বক উজ্জ্বল করে। এলোভেরা পাতা থেকে খুব সহজেই জেল সংগ্রহ করা যায়। ব্রণ দূর করতে এলোভেরা জেলের সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে ব্রণে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১/৪ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তবে এলোভেরা জেল সংগ্রহের পূর্বে অবশ্যই এলোভেরা থেকে হলুদ রস বের করে নিবেন নয়তো এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেবুর রস: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও সাইট্রিক এসিড যা ব্রণ শুকাতে ও দাগ কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ২ টি পাতি লেবুর রসের সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ব্রণের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন এতে ব্রণ শুকিয়ে যাবে। আবার লেবুর রসের সাথে সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন ত্বকে। ১৫ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি যেমন ব্রণ দূর করতে সাহায্য করবে তেমনটি মুখের কালচে দাগ দূর করবে।
হলুদ: হলুদে রয়েছে অ্যান্টি ব্যক্টেরিয়াল উপাদান যা ব্রণে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে। ১ টেবিল চামচ হলুদের সাথে ২ টেবিল চামচ বেসন ও গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেসপ্যাক। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন প্যাকটি ব্যবহার করুন এতে ধীরে ধীরে ব্রণ কমে যাবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ১টেবিল চামচ হলুদ গুড়োর সাথে ২টেবিল চামচ চালের আটা ও ৩ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
শসা: ত্বকের যত্নে শসার রস অত্যন্ত কার্যকরী। শসাতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’ এবং ‘ই’। শসার সাথে টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিলে এটি টোনারের মতো কাজ করবে। ত্বক সতেজ রাখতে শসা থেঁতো করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে শসা টুকরো করে কেটে ব্রণের স্থানে ঘষে নিন।
মধু: মধুকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। একটি সাদা ব্যান্ডেজে মধু লাগিয়ে ব্রণযুক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন এতে ব্রণের তরল পদার্থ দ্রুত কমে যাবে। তবে এলার্জির সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
মসুর ডাল: শুষ্ক ত্বক তুলতুলে ও ব্রণের প্রকোপ কমাতে পরিমাণ মতো ডাল বাটার সাথে সমপরিমাণ গাঁদাফুল বাটা মিশিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য ত্বকে লাগিয়ে নিন।