ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার সড়ককে চার লেন করতে ৯৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার একটি প্রকল্পে শুধু ভূমি অধিগ্রহণেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৭ কোটি টাকা। পুরো টাকাই দেশজ উৎস থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবটি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে জমা পড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে সংকটের সময় পুরো নিজস্ব অর্থায়নে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াও পরিষেবা ও অন্যান্য প্রশাসনিক খাতে ব্যয় হবে আরও ২১৯ কোটি টাকা। এতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটির জন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দা; গোপালগঞ্জের মকসুদপুর ও কাশিয়ানী; নড়াইলের সদর ও লোহাগড়া; যশোরের সদর, বাগারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বর্তমানে ভাঙ্গা–বেনাপোল সড়কটি দুই লেনের। এটাকে চার লেন করতে সড়কটির আশপাশে প্রায় ৯৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, এটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। অবশ্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে নেওয়া হবে আরেকটি প্রকল্প।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলো বলছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আগামী দু–তিন বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে থাকবে। অন্যদিকে সরকারও উন্নয়ন প্রকল্পে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নিয়েছে। কমানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্পের খরচ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও বড় অবকাঠামো–বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থনীতিতে চাপের সময় এই ধরনের প্রকল্পে এত টাকা খরচের কোনো যৌক্তিকতা নেই। মূলত নির্বাচনের বছরে দলীয় লোকদের কাছে অর্থ পৌঁছাতেই এই আয়োজন। কারণ, দলীয় নেতা–কর্মীরা প্রকল্প এলাকায় জমি কিনে ফেলবেন। চাঁদপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনার সময় এমন উদাহরণ দেখেছি। সেখানে প্রভাবশালীরা আগেই জমি কিনে ফেলেছেন।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। এই সময় নিজস্ব অর্থায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে জমি অধিগ্রহণের প্রকল্প নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো মানে নেই।