বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতেই রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। এক দিনে ঘুরে এসে তুলে ধরছি স্বল্প দূরত্বে মুন্সীগঞ্জের কোথায় এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। প্রাচীনকালে নিঃসন্দেহে মুন্সীগঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। অঞ্চলটি খ্রিস্টীয় দশ শতকের শুরু থেকে তেরো শতকের প্রথম পর্যন্ত চন্দ্র, বর্মন ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল।
ইদ্রাকপুর কেল্লা
মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইদ্রাকপুর কেল্লা অবস্থিত। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সেনাপতি ও বাংলার সুবেদার মীর জুমলা কর্তৃক ১৬৬০ সালে বিক্রমপুরের এই অঞ্চলে ইদ্রাকপুর কেল্লা নামে এই দুর্গ নির্মিত হয়। সে সময় মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে এলাকাকে রক্ষা করার জন্য দুর্গটি নির্মিত হয়।
জনশ্রুতি আছে, এ দুর্গের সঙ্গে ঢাকার লালবাগের দুর্গের সুড়ঙ্গপথে যোগাযোগ ছিল। শত্রুদের উদ্দেশ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য দুর্গটির দেয়ালে অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গের চার কোনায় রয়েছে একটি করে গোলাকার বেষ্টনী। এই দুর্গটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। বহু উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত এই গোলাকার দুর্গটি এলাকায় এসডিও কুঠি হিসেবে পরিচিত।
কীভাবে যাওয়া যায়
মুন্সীগঞ্জ সদরের কাছে পুরাতন কোর্ট অফিস সংলগ্ন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট বা দীঘিরপাড় ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে মুক্তারপুর আসা যায়। মুক্তারপুর থেকে অটোরিকশায় ১০ টাকা জনপ্রতি বা রিকশায় ২০-২৫ টাকায় ইদ্রাকপুরের কেল্লায় যাওয়া যায়। এ ছাড়া সদরে নেমে অটোরিকশাচালককে ইদ্রাকপুরের কথা বললেই নিয়ে যাবে।
প্রথমে ইদ্রাকপুর দুর্গ ঘুরে দেখলাম আমরা। তারপর চিন্তা এলো নদীর পাড় যাব। অটোরিকশাচালক বললেন মোল্লার চর যেতে পারেন। ব্যাস ইদ্রাকপুর থেকে মোল্লার চর যাত্রা শুরু। অটোতে করে দু’জন মাত্র ২০ টাকা দিয়ে মোল্লার চরের কাছাকাছি এসে নামলাম। এরপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে মোল্লাবাড়ির বাজারের ভেতরের গলি ধরে এগিয়ে চলা। একটু পরেই প্রকৃতির অনন্য রূপ নজরে এলো। সড়কের দু’ধার ধরে বেশ গাছ। একটু এগোলে দূরে তাকালেই চোখে পড়ে নদী। জায়গাটির আসল নাম চর কিশোরগঞ্জ, মোল্লার বাড়ি। স্থানীয়রা ডাকেন মোল্লার চর বলে। আর খানিক বাদেই দেখা মিলল দুটি রেস্টুরেন্ট। এ পরিবেশে চা না খেলে হয়! নাকিব আর আমি দু’জন মিলে চা না পেয়ে কফি খেয়ে নিলাম। অসাধারণ এক পরিবেশে কাটিয়ে দিলাম বেশ খানিকটা সময়। রেস্টুরেন্টের বাইরের পরিবেশে কফি খেতে খেতে নদীর কলতান উপভোগ করলাম। নদীর ঢেউ পাড়ে আছড়ে পড়া দেখে মনে হবে শান্ত সমুদ্রের উদাস করা ঢেউ। যে কেউ চাইলেই স্বল্প সময়ের দূরত্বের এ জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন। প্রথমে ইদ্রাকপুর ঘুরে সেখান থেকেই মোল্লার চরের কথা বললে অটোরিকশা নিয়ে যাবে সেখানে। ভাড়া ২০ টাকা।
অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটা
মোল্লার চর ঘুরে আমরা রওনা দিলাম অটোতে প্রখ্যাত পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটা দেখতে। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর হলেন একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, যিনি পাল সাম্রাজ্যের আমলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। তার জন্মস্থানের বাস্তুভিটাকে এখনও স্থানীয় জনগণ ‘পণ্ডিতের ভিটা’ বলে অভিহিত করে।
বিক্রমপুর বৌদ্ধ বিহার, রঘুরামপুর
নাটেশ্বর ঘুরে রঘুরামপুরে অবস্থিত বিক্রমপুর বৌদ্ধ বিহার দেখতে যেতে পারেন। বিক্রমপুর বিহার বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের অন্তর্গত রঘুরামপুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।
এটি মহারাজ ধর্মপালের শাসনামলে নির্মিত ৩০টি উল্লেখযোগ্য বিহারের মধ্যে অন্যতম। ধর্মপাল ছিলেন পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট। ঐতিহাসিকভাবে এই মঠটি অতীশ দীপঙ্করের সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অতীশ দীপঙ্করের জীবদ্দশায় এই অঞ্চলটি ছিল বৌদ্ধধর্ম শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু এবং চীন, তিব্বত, নেপাল ও থাইল্যান্ডের মতো দূরবর্তী অঞ্চল থেকেও প্রায় আট হাজার অধ্যয়নকারী ও অধ্যাপক এখানে অধ্যাপনা করতে আসতেন।